1. my@subarnabarta.online : সুবর্ণ বার্তা : সুবর্ণ বার্তা
  2. info@www.subarnabarta.online : সুবর্ণ বার্তা :
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

ঢাকার প্রেম বাজার| লেখক- তানভীর ইরাক

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

বহুদিন আগের কথা। একদা রাতের বেলা আমি আমার এক বন্ধু ঢাকা মোহাম্মদপুর সঙ্কর থেকে মহাখালী শিশু হসপিটালেরর উদ্দেশ্যে বের হলাম। রাত তখন প্রায় ১২ কিংবা সাড়ে ১২ টা। রাস্তায় কোন গাড়ি ঘোড়া নেই। কিন্তু আমাদের যেতে হবে মহাখালী। বন্ধুর ছেলে অসুস্থ। সে হসপিটালে ভর্তি। কি করার নিরুপায় দু’বন্ধু পায়ে হেঁটে চললাম। সামনে কোন গাড়ি পেলে উঠে যাব। এই ভেবে চললাম। চলার পথে ফার্ম গেইটের ফুটপাতে দেখলাম দু’টো মহিলা বসে আছে। তারা যেখানে বসে আছে তার পাশে দুটো কুকুরও বসে আছে। এমন সময় সামনে থেকে একটা তরুণ যুবক আসতেছে। মহিলাগুলো ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুনলাম- এই ছেলে লাগাইবি? লাগাইবি? ছেলে বলল- না। মহিলা বলল- লাগাইতি নো কা? ছেলে বলল- টাকা নাই। মহিলা বলল – টাকা নাইকা? তারা এসব বলছিলো আর ছেলেটা দেখলাম খুব দ্রুত গতিতে হেটে যাচ্ছিল। আমরা তখন তার পাশ ঘেঁষে যাচ্ছিলাম আর এ কথাগুলো শুনলাম। ঢাকায় আমি তখন প্রায় নতুন। তাছাড়া, এত রাত্রিতে আর কখনও বের হইনি। তাই এসব সম্পর্কে তখন আমার তেমন ধারণা নেই। আমার বন্ধু তখন ঢাকার জন্য বেশ পুরাতন। সব বিষয়ে তার ভালই অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম বন্ধু মহিলা এগুলা এই ছেলেটাকে এসব কি বলল? কি লাগাইবি? লাগাইবি? আবার ছেলে বলল যে- না, টাকা নাই। তো কি লাগাবে? আর মহিলা এগুলো এতরাত এখানে কি করছে? আমার প্রশ্নের জবাবে বন্ধু হেসে বলল- তুই ঢাকায় নতুনতো তাই বুঝোসনি। আমাদের গ্রামে মানুষ যখন ঘুমে বিভোর। তখন এই ঢাকার রাস্তায় এগুলো চলে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এগুলা কি? সে বলল- গ্রামের দম্পতিরা যা করে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এরাতো দম্পতি না। আমি দেখলাম একটা পথচারী আর ফুটপাতে বসা অল্প বয়স্কা দু’টা মহিলা, দু’টা কুকুর। সে আমাকে বলল- এরা গ্রামের দম্পতিদের কাজ টাকার বিনিময় করে। তার এ কথা শুনে আমিতো বিস্মিত! কি বলে এসব! সত্যি? আমার বন্ধু বলল- তুই করবি? আমি তাকে পেছন থেকে স্বজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম, যাহ পাগল কোথাকার। এগুলা কি মহিলা? এগুলাতো কুকুর সমতুল্য। মানুষ এদের সাথে এগুলো করে? আমার বন্ধু আমাকে বলল, তুই না করলে কি হইছে কত লোকে এগুলো করে। তুইতো সবে মাত্র একটা দেখছোস। সামনে আরো কত দেখবি। সামনে কিছু দূর যেত সত্যি দেখলাম ফুটপাতে টং দোকানের আড়ালে তেরপাল টাঙ্গিয়ে চলছে। কেউ আসছে কেউ যাচ্ছে। চলছে আলো আধারী খেলা। দেখলাম পাশে একটা লোকও দাঁড়িয়ে আছে। সবাই তেরপালের ভেতর থেকে বেরিয়ে ঐ লোকটার সাথে দেখা করছে, আর কি যেন দিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, এই লোকটা এখানে কি করছে? সবাই যে টং দোকানের আড়াল থেকে বেরিয়ে তার সাথে দেখা করছে আর কি যেন দিচ্ছে? বন্ধু বলল, এ এই বাজারের দালাল। সবাই তাকে কাজের টাকা দিচ্ছে। আমি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম কি কাজ? এরা যে শুধু আসছে আর যাচ্ছে? সে ঠিক আগের কথাটিই বলল, গ্রামের দম্পতিরা যা করে সে কাজ। এবার আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- গ্রামে যেটা ভালবাসার বিনিময় পাওয়া যায় এই শহরে সেটা তাহলে টাকায় পাওয়া যায়? সে বলল- হ্যাঁ। এতক্ষণে বুঝছোস তাহলে। আমি তখন বন্ধুকে বললাম- আমাদের গ্রামের মানুষতো তাহলে অনেক ভালরে। বন্ধু বলল- তাতো অবশ্যই। প্রামের ওরা হচ্ছে বউ আর এরা হচ্ছে দেহব্যবসায়ী, পতিতা। অর্থের লোভে টাকার বিনিময় তাদের দেহ বিক্রি করে। আর কিছু যৌন ক্ষুধাতুর তারা তাদের যৌন ক্ষুধা নিবারনে এখানে আসে আর টাকার বিনিময়ে তারা তাদের ক্ষুধা নিবারন করে। এসব বলতে বলতে সামনে আমরা একটা টেম্পু পেয়ে গেলাম। অতঃপর আমরা টেম্পুতে উঠে পড়লাম এবং সোজা মহাখালী শিশু হসপিটাল চলে আসলাম। হসপিটাল সেরে আমরা সোজা বাসার উদ্দেশ্যে একটা রিক্সা নিলাম। গভীর রাত, আলো আঁধারীর শান্ত ঢাকা, রিক্সা তার প্রতিকূল বাতাসের অভিমুখে এগিয়ে চলা, সব মিলিয়ে ভালই লাগছে। ভাল লাগার চলমান পথে দূর থেকে দেখলাম সামনে আলো আধারে দু’জন ফুটপাতে খুব গড়াগড়ি করছে। মনে হয়েছিল সেখানে কোন রেসলিন খেলা চলছে।  দূর থেকে তাদের এ দৃশ্য দেখে আমি রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম, মামা সামনে মনে হয় রেসলিন খেলা হচ্ছে দাঁড়াইয়েনতো সেখানে একটু। রিক্সাওয়ালা মামা ঠিক আমার কথামত সেখানে গিয়ে ব্রেক করেন। সেখানে গিয়ে দেখলাম দূর থেকে যা ভাবছিলাম সম্পূর্ণ তার বিপরীত। এখানেও চলছে সে প্রেম বাজার। আমাদের দাঁড়ানো দেখে তারা মনে করছিল আমরা তাদের খদ্দের। কর্ম ব্যস্ত দুই খদ্দের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টো রিক্সা থেকে দু’জন আমাদের দিকে এগিয়ে আসে আর বলছে, মামা আপনারা কাজ করবেন? করবেন? তাদের আবেদনে আমিতো আর আগের মত বোকা নয়। আমিও এখন একটু একটু চালাক হয়েছি। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম কত? বলল- জন প্রতি ৫০। আমি বললাম- তাই? তাই প্রশ্নবোধক শব্দ শুনে তারা বুঝতে পেরেছে আমরা খদ্দের নয়। আমরা তাদের সাথে মশকরা করছি। তারা বুঝতে পেরে  আমাদের বললেন, করলে করেন না হয় যান। এখানে দাঁড়িয়ে থাকিয়েননা। ততক্ষণে আমরা সামনে চলে যাচ্ছি। অমনিতে সামনে পড়লো পুলিশ।  পুলিশ আমাদের রিক্সা দাঁড় করিয়ে আমাদের তল্লাশী করে বললো এতরাত রোড়ে কেন? আমরা আমাদের কথা বললাম। তারপর আমাদের ছেড়ে দেয়।  আমরা বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে শূন্য খাটে কেবলই ভেসে উঠে রেসলিন খেলার কথা। জীবনে প্রথম সরাসরি দেখছিতো তাই। ভাবতে ভাবতে একদা ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু সেখানেও দেখি রেসলিন খেলা। এবার সেখানের খেলোয়াড়দের সাথে দেখছি আমিও আছি। আমিও খেলছি।  কি মজা রেসলিন খেলা। খেলতে খেলতে একপর্যায় সেই ঘুমের ঘোরেই দেখছি এটাতো বাস্তব নয় কল্পনা। আর অমনিতেই ঘুম ভেঙে যায়। আর খেলাও শেষ হয়ে যায়। আহা ঢাকার প্রেম বাজার!

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট