ছবি: সংগৃহীত
গত ১৮ই জানুয়ারী ২০২৫ খ্রি. হয়ে গেল সুবর্ণচরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ জয়নাল আবেদীন সরকারী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। যদিও আমি এই স্কুলের কোন ছাত্র নই তারপরেও আমি এই এলাকার একজন নাগরিক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐকতান সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম টানা ৫ বছর এবং পর পর ২বছর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ছিলাম ,যার কারনে এই অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি ।আমি যদিও আমন্ত্রিত ছিলাম না তার পরেও এলাকার প্রতিষ্ঠান ,এলাকার ভালোবাসার প্রানকেন্দ্র হিসেবে অনুষ্ঠান নিয়ে আমার এই মূল্যায়ন ,যা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত ।
কোন প্রতিষ্ঠান যদি ৫০ বছর অতিক্রান্ত করে তখন এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলককে স্মরন করার জন্য,অতীত মূল্যায়ন করার জন্য এবং ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারনের জন্য উক্ত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অতীতকে স্মরনের সাথে অতীতের সাথে বর্তমানের একটি সেতু বন্ধন বানানো হয় নতুন প্রজন্মের জন্য।
যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য সবার আগে দরকার দলমত নির্বিশেষে একটি কমিটি ।সেই কমিটির মাঝে থাকবে অনেকগুলো উপকমিটি।যাদের মূল লক্ষ্যই শুধু অনুষ্ঠানকে সবদিক থেকে সুন্দর করে সাজানো।কমিটির মাধ্যমেই পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। অনুষ্ঠান কমিটি গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় আর অনুষ্ঠানে শেষ হওয়ার পর কমিটির মিটিংয়ের মধ্যদিয়েই অনুষ্ঠান শেষ হবে। সকল ধরনের স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে জবাব দিহিতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে কমিটির বিলুপ্তি ঘোষনা করা হয়।
এই অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত সবাইকে শুরুতে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। এত বড় একটা অনুষ্ঠান সকাল ৮ টা হতে রাত ২ টা পযন্ত গড়ালো কোন ধরনের বিশৃংখলা ছাড়া।অনুষ্ঠান আয়োজকদের এবং এলাকাবাসীর জন্য প্রথমেই ১০/১০ ।
সুবর্ণচরের উপজেলার মধ্যে এত সুন্দর স্টেজ এবং প্যান্ডেল আগে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই ,পুরোপুরি ঢাকা চট্টগ্রামের যেকোন প্রোগ্রামকে টেক্বা দিতেই পারে।(১০/১০)
যেকোন অনুষ্ঠানের সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো কম টাকার মধ্যে সবাইকে খুশি করার মতো শিল্পী এবং গান পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠানকে এক কথায় গরম করে দেয়া ।যার উপরে নির্ভর করে অনুষ্ঠানের সফলতা ও ব্যার্থতা। কমিটি সব সময় আতংকে থাকে আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পী টাকা নিয়ে আসবে কি আসবে না ,কি ধরনের গান গাইবে ,পুরুষ গায়ক নাকি গায়িকা আসবে এইসব চিন্তা করতে করতে সব সময়ই কমিটির সিনিয়র মেম্বারদের সাথে জুনিয়র মেম্বারদের মন কষাকষি চলতেই থাকে। সুবর্ণচরের মতো ইউনিয়নে সকল প্রতিবন্ধকতার উপরে কাজ করে ধর্মভীরুতা। এখানের লোকজন ব্যান্ড শিল্পীর চেয়ে ওয়াজ এবং তাফসীরে বেশী অভ্যস্ত।সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের এই অংশটুকু যারা পরিচালনা করেছেন তাদের সাহসের তারিফ করতে হয়।তবে শিল্পী নির্বাচনে আরেকটু সচেতন হলে অনেক সমালোচনা এড়ানো যেত। (৬/১০)
অনুষ্ঠানে অনেক সিনিয়রকে নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে ,ফেইসবুকে রীল বানানো হচ্ছে ,কোন সিনিয়র কিভাবে কার সাথে নাচছে ,কে কতক্ষন স্টেজে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদেরকে অবস্যই অবস্যই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।ছোট্ট একটি উদাহরন দিই : ১৯৯৪ সালে যখন মোবাইল ছিল না তখন যোগাযোগের চিঠিই একমাত্র বাহন ছিল ।আমার ছোট মামা তখন সেীদি আরব ছিলেন। আমি মামাকে একটি চিঠি লিখেছিলাম,মামা সেই চিঠি পেয়ে উত্তর দিয়েছিলেন । মোট লেগেছিল ৪৬ দিন আর বর্তমানে ২সেকেন্ডের মধ্যেই আপনি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তরে যোগাযোগ করতে পারবেন।২০২৫ ইং সনের অনুষ্ঠান নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন ২০০০ সালে এই ধরনের অনুষ্ঠান সুবর্ণচর হবে কারো কল্পনাতেও ছিল না আবার ২০৫০ সালে কি ধরনের অসাধারন অনুষ্ঠান হবে কেউ তা কল্পনাও করতে পারবে না। এটাই মানুষের জীবন ,যা নদীর পানির মতোই বহমান। প্রতিনিয়ত ছুটছে নতুন কিছুর আশায়।
যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য সমালোচনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি যাই করেন সমালোচনা হবেই হবে। তবে স্কুলের রানিং ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা হলে অনেক ছাত্র/ছাত্রী অংশগ্রহন করতে পারতো আর শিল্পী হিসেবে নোবেল ছাড়া অন্য কেউ হলে সমালোচনার পরিমানটা একটু কম হতো।এলাকার সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে সংবাদ সংগ্রহ তথ্যটা শুনতে ভালো লাগেনি,কতটুকু সত্য আমি নিশ্চিত নই তবে আমি শুনেছি।
আমার ব্যক্তিগত এই মতামত সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসা এবং কমিটির সকলের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা এবং এলাকার নাগরিকের দায়বদ্ধতা থেকেই এই লেখা।নিজের অনিচ্ছায় কোন ভুল হয়ে থাকলে অগ্রীম দু:খপ্রকাশ করছি।
সকল দিক বিবেচনা করে অনুষ্ঠানটি আমার ভালো লেগেছে ।কমিটির সকল সদস্য এবং যারা এই অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিল সবাইকে শুভেচ্ছ।
“পঞ্চাশে পা, স্মৃতির আলো,
অতীতের গর্ব, ভবিষ্যৎ ভালো।
যদি শেখা যায় ভুলের পাঠ,
তবেই হবে উন্নতির হাত।”