ঘুমের ঘোরে বিশ্ব প্রভূ|তানভীর ইরাক
এক স্বপ্ন বিলাসী গেদু রাজ। তার স্বপ্ন সে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমনটি চলে অভিন্ন স্রষ্টার নির্দেশে আকাশ বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, তারকারাজী ইত্যাদি।
স্বপ্ন বিলাসী রাজ তার সেই স্বপ্ন পূরণে যেটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তা হচ্ছে অর্থ। তার বিশ্বাস অর্থই সকল ক্ষমতার উৎস। আর সেই অর্থের জন্য প্রয়োজন একটি কর্ম। যার মাধ্যমে সে অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হবে। আর অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারলেই তার স্বপ্ন বাস্তব হবে। সে হিসেবে গেদু রাজ পেশা হিসেবে নির্মাণ শ্রমিকের কাজকে বেচে নেন এবং তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে থাকেন। কাজ করে তার অর্থনৈতিক অনেক উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে তার নিরলস কর্মের মাঝে একদিন সে তার কর্মেস্থলে হঠাৎ অনুপস্থিত। তার এ অনুপস্থিতির মাঝে ঠিকাদার রহিম এসে উপস্থিত। রহিম তার অনুপস্থিতির কারণে তার সন্ধানে বের হয়। কিন্তু কোথায় গেলে পাবে তাকে? কোথায় তার বাসা? তবুও রহিম সামনে এগিয়ে চলল তার সন্ধানে। চলতে চলতে রহিমের সামনে পড়ে এক বৃদ্ধ লোক। রহিম তার গেদু রাজের সন্ধান পেতে তার সহযোগিতা নেন। রহিম বৃদ্ধ চাচাকে গেদু রাজের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু বৃদ্ধ চাচা গেদু রাজকে ঠিক চিন্তে পারেননি। ঠিকাদার রহিম তখন তার পরিচয় দেন এবং গেদু রাজ তার অধীনে একটি সাইটে ইট-বালির কাজ করেন কিন্তু সে আজ অনুপস্থিত।
রহিমের বিস্তারিত কথা শুনে ততক্ষণে বৃদ্ধ চাচা বলে উঠেন রাজ মিস্ত্রি গেদু? হ্যাঁ, তাকেতো চিনি। ঐযে নদী পাড়ে তার বাড়ি। বৃদ্ধ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ঠিকাদার রহিম যায় নদী পাড়ে তার বাড়িতে। বাড়ি গিয়ে দেখে গেদু রাজ খড় কুড়োয় নির্মিত একটি ঘরে মাটির বিচানায় শুইয়ে নিরালায় ঘুমোচ্ছে। ঠিকাদার রহিম তাকে ডাকলেন। সে শুনছিলনা। এরপরও ডাকছেন। পথিমধ্যে একটি মেয়ে ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন। তখন ঠিকাদার রহিম মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন গেদু রাজ তোমার কি হয়? সে বলল, ডেডি। এরপর ঠিকাদার রহিম মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, তোমার ডেডি আজ কাজে যায়নি কেন? মেয়েটি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। অতঃপর ঠিকাদার রহিম মেয়েটিকে বলল, তোমার ডেডিকে আমি ডাকছি সেতো শুনছেনা। তাকে উঠিয়ে দাও। ঠিকাদার রহিমের কথায় গেদু রাজ মেয়ে বাবাকে ডাকতে লাগলেন, ডেডি! ডেডেি! কলিং ইউ এ ম্যান! কলিং ইউ এ ম্যান। বার বার ডাকা সত্ত্বেও গেদু রাজের ঘুম ভাঙছেনা। তবুও সে ডাকতে থাকলো। একদা গেদু রাজের ঘুম ভাঙে। কিন্তু ঘুম ভাঙলেও ঘুমের ঘোর কাটেনি তার। সে আগন্তুক কন্ঠে বলে উঠলো, কে? কে আমাকে ডাকছে? আমি কি গোলাম? আমি কি কারো নির্দেশে চলি? আমিতো প্রভূ আমার নির্দেশে চলে সবই। আকাশ-বাতাস, পাহাড়-পর্বত, চন্দ্র, সূর্য, সাগর, মহা-সাগর ইত্যাদি। আমায় আবার কে ডাকে?
ঠিকাদার রহিম তার এহেন আচরণে নিজেই হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং বলেন, এই পাগল! আমি ডাকছি। আমার সাথে কথা বল। কিন্তু সে তার কথায় কর্ণপাত না করে ঠিকাদার রহিমের সাথে জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে। যে যুদ্ধ এখনও থামেনি…।