তানভীর ইরাক
এক দেশে এক হাওলাদার পাড়া ছিল। সাদা-কালা, হিন্দু -বৌদ্ধ -খ্রিস্টান সকলে সেখানে একসাথে বাস করতো। তাদের মধ্যে ছিল না কোন হিংসা বিদ্বেষ, ছিল সম্প্রতির এক অনন্য বন্ধন। তাদের একে অন্যের প্রতি ছিল প্রেম প্রীতি ভালবাসা। বিয়ে, সাধী , ঈদ, পূঁজো, পার্বন, বড়দিনসহ বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আসা যাওয়া ছিল তাদের। কিন্তু এই সুন্দর সহাবস্থানে হঠাৎ ঘটে একটা দূর্ঘটনা। ঘটনাটি ছিল পাড়ার মসজিদের ইমামতি নিয়ে দু’ভাইর মাঝে। আর এ দু’ভাই থেকে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাড়ায়। পাড়ার মসজিদের ইমাম ছিল বড় ভাই। কিন্তু মুসল্লিরা তাকে বাদ দিয়ে ছোট ভাইকে ইমাম নির্বাচিত করেন। বড় ভাইকে বাদ দিয়ে ছোট ভাইকে ইমাম নির্বাচিত করা বড় ভাই এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেন নি। যেহেতু বড় ভাই দীর্ঘদিন এই মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আবার, অনেকদিন পর ছোট ভাইকে যখন মুসল্লিরা ইমাম নির্বাচিত করেছেন ছোট ভাইও তা ছাড়তে নারাজ। এই নিয়ে তাদের দুই ভাই’র মাঝে বেঁধে যায় ঝগড়া। পার্শে ছিল হিন্দু মন্দির। স্বাভাবিকত পাড়ায় মুসলিম-হিন্দু- বৌদ্ধ-খৃস্টান তাদের মধ্যে সম্প্রতির বন্ধন থাকলেও বড় ভাইয়ের সাথে পার্শবর্তী মন্দিরের পুরোহিত নবচন্দ্রের সাথে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু সমস্যা ছিল। তাই, এই সময় মসজিদের ইমামতি নিয়ে মুসলিম দু’ভাইয়ের ঝগড়ার সুযোগ নেই হিন্দু পুরোহিত “নবচন্দ্র”। সে ছোট ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে বড় ভাইের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট ভাইকে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে ছোট ভাইকে লেলিয়ে দেয় বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। কু-প্ররোচনা যোগায় ছোট ভাইকে- তোকে যদি ইমামতি না দেয় তুই অভিন্ন মসজিদে থাকবিনা। মসজিদকে দ্বি-খন্ড করে ফেলবি। সে জন্য যা যা করার পেছন থেকে আমরা করবো। তুই শুধু তোর মৌলবাদী মুসল্লিদের নিয়ে সামনে থাকবি। আর বলবি, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এরপর মসজিদ দ্বি- খন্ডিত হলে আমরা দ্বি-খন্ডিত নতুন মসজিদের ইমাম বানাবো তোকে। হিন্দু পুরোহিত নবচন্দ্রের এ আশ্বাস পেয়ে ছোট ভাই মৌলবাদী মুসল্লিদের নিয়ে গোঁচ মেরে মাঠে নেমে পড়ে এবং স্লোগান দিতে থাকে প্রিয় ভাইয়েরা আপনারা জানেন (……….) তাই আমরা আর অভিন্ন মসজিদে থাকতে চাইনা। আমরা মুক্তি চাই, স্বাধীনতা চাই। তাই আবারও বলছি, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
……এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনার সংগ্রাম। এই বলে যুদ্ধ শুরু মৌলবাদী ছোটভাইয়ের স্বাধীন মসজিদের। দীর্ঘ ৯ মাস রক্ত ক্ষয়ি যুদ্ধে অবশেষে মসজিদটি পূর্ব পশ্চিমে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আর হিন্দু পুরোহিত নব চন্দ্রের সেই আশ্বাস অনুযায়ী স্বাধীন পুর্ব মসজিদের ইমাম নির্বাচিত হয় ছোট ভাই। এবং স্বাভাবিক হয় পাড়ার পরিবেশ। অভিন্ন পাড়ায় দু’টি স্বাধীন মসজিদ হলেও অতীত ভুলে তারা দু’ভাই আবার এক। কিন্তু তাদের এ একাত্মতা মেনে নিতে পারেননি হিন্দু পুরোহিত নব চন্দ্র। এক পর্যায় সুকৌশলে হত্যা করে তাকে। এবং নতুন মসজিদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ নেয় নবচন্দ্র। সে তার পছন্দ সই ব্যক্তিকে ইমাম নির্বাচিত করে মসজিদের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর এ নিয়ন্ত্রণ চলতে থাকে দশকের পর দশক। তাদের দীর্ঘ এ অবৈধ নিয়ন্ত্রণে জন্ম হয় পাড়ায় নতুন প্রজন্মের। পাড়ায় পূর্ব পশ্চিম দু’ভাগে বিভক্ত দু’টি মসজিদ হলেও অতীত ভুলে তারা এখন সব ভাই ভাই। তাদের মধ্যে নেই পূর্বের কোন রেশ। কিন্তু শান্ত সুন্দর স্বাধীন মসজিদে হিন্দু পুরোহিত নব চন্দ্রদের কর্তৃত্ব পরিলক্ষিত হয় নতুন প্রজন্মের। তাদের এ কর্তৃত্বে নতুন প্রজন্ম জানতে শুরু করেছে তাদের স্বাধীন মসজিদের ইতিহাস। জানতে পেরে তারা বর্তমানে জেগে উঠেছে এবং নতুন মুক্তির আশায় তারা বলতে শুরু করেছে কর্তৃত্ববাদী নব চন্দ্রদের বিরুদ্ধে- পাক ঘরে তুমি কে?