মাইক্রোবায়োলজিস্ট জহিরুল ইসলাম রুবেল
ডাক্তার বাবু নিষেধ করেছেন কামরাঙা না খেতে। কিছু সংখ্যক মানুষ কামরাঙা খাওয়া বন্ধ করে দিলেও অধিকাংশ মানুষ তা দেদারসে খেয়ে যাচ্ছেন।
আসুন আমরা জেনে নিই কামরাঙ্গা কিভাবে আমাদের কিডনী বিকল (kidney Failure) করে দেয় এবং মৃত্যুর দিকে দাবিত করে!
কামরাঙ্গায় বিশেষ কী রয়েছে?
কামরাঙায় আছে এমন দুটি উপাদান যা কিডনি বিকল করে দেয়। যথাঃ-
১. অক্সালিক অ্যাসিড।
২. ক্যারাম্বক্সিন।
🛢অক্সালিক অ্যাসিড, টক অবস্থায় মিষ্টি অবস্থার চেয়ে বেশি থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ মিলিলিটার কামরাঙার জুসে ০.৫০ গ্রাম অক্সালিক অ্যাসিড রয়েছে।
সাধারণত অত্যধিক কামরাঙ্গা বা রস অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণে অনেক দিন গ্রহণ করে তাহলে শরীরে অতিমাত্রায় অক্সালিক অ্যাসিড জমে গিয়ে অক্সালেট নেফ্রোপ্যাথি হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে।
🛢কামরাঙ্গায় রয়েছে আরও একটি ভয়াবহ ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নিউরোটক্সিন। মার্কিন বিজ্ঞানীরা কামরাঙ্গার এই ক্ষতিকর উপাদানটির নাম দিয়েছেন ক্যারামবক্সিন (Caramboxin)। কামরাঙ্গার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যারাম্বোলা (Carambola) থেকেই এই ক্ষতিকর উপাদানটির নামকরণ করা হয়েছে।
ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়েছেন, কিডনির সমস্যা থাকলে কামরাঙ্গার মধ্যে থাকা ক্ষতিকর ক্যারামবক্সিন-এর প্রভাবে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ক্যারামবক্সিন-এর প্রভাবে শরীরে যে সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে সেগুলি হল—
১ মাথা ঘোরানো।
২) বমি বমি ভাব।
৩) ক্রমাগত হেঁচকি ওঠা।
৪) শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
৫) শরীরে মৃগী রোগীর মতো কাঁপুনি বা খিঁচুনি শুরু হওয়া
৬) মেন্টাল কনফিউশন
৭) কোমায় চলে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু।
আসুন জেনেনিই ক্যারামবক্সিন নামক নিউরোটক্সিন কি ভাবে ক্ষতি করেঃ-
কামরাঙ্গায় থাকা ক্যারামবক্সিন নামক নিউরো টক্সিন আমাদের ব্রেনে নিউরনের কার্যক্ষমতাকে আটকে দেয়।
আমাদের ব্রেনে ৫০ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে এবং নার্ভাস সিস্টেম, আমাদের শরীরের সমস্ত কর্মকা-, অনুভূতি, সংবাদ প্রেরণ, সাড়া দেওয়া, সংবাদ পৌঁছানো সবই নিউরনের কাজ। কিন্তু ক্যারামবক্সিন এই গুরুত্বপূর্ণ নিউরনের ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ড্যামেজ করে, ফলে নিউরন তার কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না। সুতরাং দুর্বল কিডনি, নষ্ট হতে থাকা কিডনি, ক্রনিক কিডনি ডিসিস অথবা একেবারেই নষ্ট হয়ে যাওয়া কিডনি রোগী (ডায়ালাইসিস করছেন) যদি কামরাঙ্গা ভুল করে গ্রহণ করেন এটি তাদের দ্রুত মৃত্যুর কারণ ঘটাতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে একেবারেই অল্প অর্থাৎ অর্ধেক কামরাঙ্গা অথবা আট আউন্স কামরাঙ্গার সরবত বা জুস মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং কিডনি দুর্বল বা ঠিকমত কাজ করছে না এমন রোগী কামরাঙ্গা থেকে সাবধান। গর্ভবতী মায়েরা যদি কামরাঙ্গা খান তবে তা নিজের জন্য এবং গর্ভজাত শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ ঘটতে পারে। এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুদের কিডনি রোগের জন্য যে সকল শিশুরা চিকিৎসা নিতে আসে তাদের কিডনি সমস্যার কারণ হিসেবে গর্ভবস্থায় মায়েদের কামরাঙ্গা গ্রহণ করাকে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ বলে অনেক চিকিৎকরা মনে করেন। তবে আমি মনে করি ‘ Prevention is better than cure’। যা খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে সেটা খাওয়ার দরকার কি? ফলের কি অভাব রয়েছে! এমনিতেই বাংলাদেশে কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি বলে বাংলাদেশের কিডনি বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন এবং ভয়ঙ্কর সংবাদ হচ্ছে শতকরা ৯০% কিডনি রোগী জানেই না যে তার কিডনি রোগ রয়েছে। সুতরাং কামরাঙ্গা না খাওয়াই ভালো। ফলজ গাছ হিসেবে কামরাঙ্গা না লাগানোই ভালো। সচেতনতাই সুস্থ থাকার উপায়।
বিইউএমএস, এমএসসি( মাইক্রোবায়োলজি) থিসিসসহ লেখক, চিকিৎসক ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার- আর এন্ড ডি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ইটিল্যাব ইন্ডাস্ট্রিজ, কুমিল্লা।