রিপোর্ট : শ্যামনগর থেকে ফিরে আলী বিন মুজাহিদ
সাতক্ষীরার সুন্দরবন তীরবর্তী শ্যামনগর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী কৈখালী ইউনিয়নের পরানপুর ও আজাদনগর এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ভয়াবহ সব অন্যায়ের নজীর গড়ছেন বিএনপি নেতা ও বিএনপিপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের সাতক্ষীরা জেলা আহবায়ক গাজী শাহ আলম ও তার বাহিনী। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের অসংখ্য চিহ্নিত অপরাধী নেতাদের সীমান্ত পার করে ভারত পালানোর ব্যবস্থা করার মতো গুরুতর সব অভিযোগ ওঠার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক লুটপাট, চাঁদাবাজী, হামলাসহ ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ। আলম বাহিনীর সদস্য খ্যাত তার সহযোগীরা এখন প্রকাশ্যেই ধারালো অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে ভীতি তৈরি করছে এলাকায়। তার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাদ যাচ্ছে না স্থানীয় সংখ্যালঘু ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গও। বেপরোয়া শাহ আলম মানছেন না দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনাও। এমনকি সম্প্রতি আটক হওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে দলীয় বিধি অমান্য করে মুক্ত করার অপচেষ্টা চালানোরও অভিযোগ ও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাধারণ জনতার ওপর অত্যাচারসহ বিভিন্ন অপতৎপরতা চালিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন শাহ আলম। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে গাজী শাহ আলমের কর্মকান্ড নিয়ে বর্তমানে রীতিমতো আতঙ্কে আছে এলাকার সাধারণ জনগণ, আর এতে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। অসংখ্য ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী,ও বিএনপি জামাতের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্য, এবং শাহ আলমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটা আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে নিজেকে সচীবের ভাই ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এমপি জগলুল হায়দারের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে সাধারণ জনগণের ওপর নির্যাতন চালাতেন শাহ আলম। তার চলাফেরা কর্মকাণ্ড সব ছিলো আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথেই। কিন্ত গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে রীতিমতো সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে পরাণপুর ও আজাদনগরের সাধারণ মানুষজনকে জিম্মি করার নেশায় মেতেছেন শাহ আলম, ৫ আগস্টের পর উদ্ভুত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে অসংখ্য সাধারণ মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করেছে শাহ আলমের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী,এরমধ্যে চাঁদা না পেয়ে ৫ আগস্ট রাত ১১ টায় পরানপুর বাজারে অবস্থিত কাপড় বিক্রেতা কাওসার ও তার পরিবারের একমাত্র জীবিকার অবলম্বন বিসমিল্লাহ গার্মেন্টস নামক কাপড়ের দোকানটি লুট করে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায় আলম ও তার বাহিনী, একমাত্র সম্বল এভাবে ধংস হয়ে যাওয়ায় পথে বসতে চলেছেন ব্যবসায়ী কাওসার, একই পরিনতি ঘটেছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পরেশ কুমার মন্ডলেরও। পরেশ কুমার মন্ডলের ওপর ২০১৯ সালেও হামলা চালায় শাহ আলম, ৫ আগস্টের পর পুনরায় পরাণপুর বাজারে তার বিকাশ ও ঔষধের দোকান লুট করে ৬ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায় আলম বাহিনী। এমন অসংখ্য পরিবার শাহ আলম বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্ত স্থানীয় প্রশাসন,সেনাবাহিনী,গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিএনপির উর্ধতন নেতাদের জানিয়েও মিলছেনা কোন সুরাহা৷ জানা গেছে শাহ আলম বাহিনীর অন্যতম প্রধান সহযোগীরা হলো আল আমিন, বেল্লাল, সাব্বির, সাদ্দাম, সোহরাব, হাবিবুর, ও আসাফুর সহ আরো ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী। এছাড়া স্থানীয় যুবদলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে শাহ আলম আওয়ামী লীগের চিহ্নিত, অত্যাচারী, ও গুরতর মামলার আসামী নেতা এবং এমপিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কৈখালী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পার করে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেককেই পার করে দিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এছাড়া সম্প্রতি শ্যামনগরের আওয়ামী লীগ নেতা ও সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম একটি মামলায় আটক হলে তাকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়াতে ছুটে আসেন শাহ আলম, কিন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হন তিনি৷। আর এভাবেই বিএনপির নেতা পরিচয়ে একের পর এক অপকর্ম,লুটতরাজ,চাঁদাবাজি,এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে সাতক্ষীরায় বিএনপির ইমেজ চরমভাবে ক্ষুন্ন করছেন শাহ আলম। এ ব্যাপারে অগ্রযাত্রা কথা বলেছে স্থানীয় বিএনপি ও জামাতের উর্ধতন দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে তারা অগ্রযাত্রা কে জানান- এ ব্যাপারে প্রমাণ পেলে দলীয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওদিকে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শাহজাহান।
৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর উদ্ভুত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিএনপির মতো স্বনামধন্য রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে রাহাজানি চালিয়ে জনসাধারণের আতঙ্ক হয়ে ওঠা গাজী শাহ আলম ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অতিদ্রুত দলীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। শাহ আলমের আরো অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে আসছে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ২য় পর্ব-